জীবনে সফল হতে চাইলে তৈরি করুন ৮টি তালিকা_তাসলিম আহমেদ

সবাই তো সফল হতে চায়, কেউ হয় কেউবা হারায়। এক কথায় বলতে গেলে সবাই তো সফল হতে চায়? কিন্তু বলাই বাহুল্য যে সবাই সফল হয়ে উঠতে পারেন না জীবনে। কারণ সবাই জানেন না চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিনিসগুলোকে কী করে একটা ফ্রেমের ভেতরে এনে সুবিন্ন্যস্ত করতে হবে, কী করে মাথার ভেতরের চিন্তাগুলোকে কাজে লাগিয়ে সুষমভাবে সাজিয়ে নেয়া যাবে।
প্রত্যেকটি মানুষই জীবনে কিছু ব্যাপারে তালিকা করে থাকেন। একজন মানুষকেও জীবনে সফল হতে হলে এই তালিকাগুলো করা অত্যন্ত জরুরি।
১. লক্ষ্যের তালিকা
প্রত্যেকটি মানুষেরই উচিত নিজের লক্ষ্যসমূহের একটা তালিকা করে ফেলা। মানুষ হিসেবে আরেকটু ভালো অবস্থানে যেতে, নিজেকে আরো বেশি সফল করে তুলতে, নিজের চোখেই নিজেকে আরো বেশি সম্মানের করে তুলতে অনেক অনেক লক্ষ্যের অদৃশ্য একটা তালিকা মনে মনে সব মানুষই করে রাখেন। হতে পারে সেটা আর্থিক স্বাচ্ছল্য, ভালো ফলাফল করা, পদোন্নতি পাওয়াসহ আরো অনেক কিছু। কিন্তু সেগুলোকে দৃশ্যমান করে একটা তালিকা করে ফেলুন। কারণ এই তালিকার দিকে চোখ বুলালেই আপনার ভবিষ্যতের জন্যে কাজ করার স্পৃহা বেড়ে যাবে। সেই সাথে বাড়বে এগিয়ে যাওয়ার মনোবলও।
২. কাজের তালিকা
মানুষ প্রতিদিন অনেক অনেক কাজ করে। কিন্তু সেগুলোর কোনো তালিকা না থাকায় মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায় কিছু কাজ করার স্মৃতি কিংবা মনেও থাকেনা সব কাজ করতে। আর তাই দিনে কী কী কাজ করলেন সেটার একটা তালিকা করে নিন। হতে পারে আপনার সামনের কাজটি অনেক বড়। একদিনে নয়, সেটা শেষ করতে সময় লাগবে এক সপ্তাহ বা এক মাস। কাজটিকে অনেকগুলো ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে নিন। আর প্রতিদিন সেগুলোর একটা একটা করে শেষ করে এগিয়ে যান বিশাল কাজটি সম্পূর্ণ করতেও।
৩. চেনা মানুষের তালিকা
মানুষের সাথে পরিচিত হওয়াটা কাজের কথা নয়, কাজের কথা হচ্ছে তাদের সাথে সেই পরিচিতির পরিধিটা ন্ধুত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। দীর্ঘস্থায়ী করা। অনেকে নিজেদের মোবাইলে পরিচিত মানুষদের নাম্বার সেভ করে রেখেই নিশ্চিন্ত হয়ে যান। কিন্তু ভুলে যান যে মোবাইল জিনিসটা নশ্বর না। সেটা যে কোন সময়েই হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর তাই নিজের পরিচিত মানুষদেরও তালিকা আর তাদের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা লিখে রাখুন।
৪. খরচের তালিকা
জনাথন সুইফট বলেছেন- বুদ্ধিমানদের টাকা তাদের হৃদয়ে নয়, মগজে থাকে। ব্যাপারটা একেবারেই সত্যি। প্রতিমাসে হিসেব করে দেখুন। আপনার খরচের খাতায় দুই ধরনের খরচ থাকে। একটি যেটা দরকারী খরচ। অন্যটি হল বিলাসিতা। মানুষ দরকারি খরচ করে বেঁচে থাকার জন্যে। বাকিগুলো ভালো এবং আরো ভালো থাকবার জন্যে। খরচের তালিকা করুন। আর নিজের আয়ের সাথে খরচের হিসেব মিলিয়ে ব্যয় করুন। নাহলে মাসের শেষে হৃদয়ের বিলাসিতা পূরণ করতে গিয়ে যেকোন সময় আপনার মাথার ভেতরটা শূন্য হয়ে যেতে পারে।
৫. জরুরী জিনিসের তালিকা
যন্ত্রপাতির এই যুগে আমাদের সবার জীবনই হয়ে গিয়েছে যন্ত্রকেন্দ্রিক। এরা আমাদের জীবনকে করে দিয়েছে অনেক বেশি আরামদায়ক আর সহজ। আর তাই সুইধাভোগের বিনিময়ে আমাদের সবারও উচিত এই জিনিসগুলোর একটা তালিকা করে ফেলা। প্রতিদিনে টুকিটাকি কাজে জরুরী ব্যবহার্য জিনিসগুলোর তালিকা করে ফেলুন এখুনি। তাহলে দরকারি সময়ে সেসবের জন্যে আলাদা সময় বা শ্রম দেওয়া লাগবেনা।
৬. উন্নতির তালিকা
মানুষের মনে কাজের ইচ্ছা ও আগ্রহ অনেক বেশি বেড়ে যায় যখন সে তার নিজের উন্নতিগুলো দেখে। অতীতে কাজের বিনিময়ে যতটা ভালো ফলাফল পাবে কেউ, সে তত বেশি আরো ভালো কাজ করতে আগ্রহী হবে। আর তাই নিজের সাফল্যের একটা তালিকা করুন আর নিজেকে পড়ে শোনান প্রতিদিন একবার করে। তাতে নিজের সাফল্য অনেক বেশি উত্সাহী করবে আপনাকে। বেড়ে যায় কাজের পরিমাণ ও গুনগত মান। বাড়বে সফলতা।
ভবিষ্যত মানুষের কাছে অনেকটা অধরা হলেও এবং বর্তমানই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময় হওয়া সত্ত্বেও তৈরি করুন ভবিষ্যতের একটা তালিকা। তাতে লিখুন কী কী করবেন আপনি আগামীতে। নতুন কোন চিন্তা মাথায় এলেই সেটাকে টুকে রাখুন। কে জানে আজ কাজে না এলেও কালকে হয়তো পুরোপুরি কাজে আসবে সেটা। শুধু তাই নয়, প্রতিটি পরিকল্পনার সাথে সাথে ভবিষ্যতে সেটার অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসেবে আরেকটি পরিকল্পনাও তৈরি করে রাখুন। এতে করে পরে কোন সমস্যা হলেও নতুন পরিকল্পনা দিয়েই পার পেয়ে যেতে পারেন আপনি। আর তাও খুব সহজেই।
৮. সাফল্যের তালিকা
কেবল সফলতা পেয়ে হাঁটার গতি আরো বেশি বাড়ালেই হবেনা। এর সাথে সাথে একটা তালিকা করুন যেখানে লেখা থাকবে আপনি এখন অব্দি ঠিক কোন কোন সাফল্য অর্জন করলেন। কাজের আগ্রহ বাড়াতেই কেবল নয়। এই সাফল্যের তালিকাটি একটা সময়, জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতেও হাসি ফোটাবে আপনার মুখে।
Previous
Next Post »
Thanks for your comment